স্বপ্নের হাতছানি
স্বপ্নের হাতছানি
“শান্তি!
শান্তি! জলদি প্লেট কয়টা ধুয়ে নিয়ে আয় ত।” “জে আনতেছি
খালাম্মা।”-দৌড়ে রান্না ঘরে ছোটে ছোট্ট এই মেয়েটি । কতই বা বয়স হবে-এগার
কিংবা বারো । কিন্তু এই ছোট্ট বয়সেই কাজের যেন শেষ নেই মেয়েটার । স্কুল
ব্যাগ কাঁধে যখন তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা –শুধু মাত্র পেটের
দায়ে আজ সে ব্যস্ত অন্যের রান্না ঘরের হাড়ি ঠেলতে।
আজ এ বাসার ছোট ছেলেটার জন্মদিন। কত আনন্দ আর রোশনাই দিয়েই না ভরে আছে পুরো বাসাটা ! কিন্ত সব রোশনাই কে ঝাপসা করে দিয়ে শান্তির চোখে বারবার যেন ভেসে উঠসে ওর ছোট ভাইটার মুখ। কত দিন যে ছোট ভাইটার ফোকলা দাঁতের হাসিটা দেখা হয় না! মায়ের পাশ ঘেঁষে কত দিন যে পরম শান্তির একটা ঘুম দেয়া হয় না! এ সবই তো সেদিনের কথাই মনে হয়।
বাবা মা আর ভাইটার সাথে অভাবের হলেও সুখের একটা সংসার ছিল। প্রতিদিন সকালে ওর ঘুম ভাঙত বাবার কুরআন তেলাওয়াতের শব্দে। রান্না ঘরের চুলার লাকড়ি পোড়ার ঘ্রাণ যেন নতুন একটা সকালের খবর জানান দিত। বাবা দিনের শুরুতে দোকানের ঝাঁপিটা খুলে বসতো । আর ছোট ভাইটাকে ইচ্ছা মত আদর করে ও দৌড় দিত স্কুল এর পথে। মাঝে মাঝে খুব অবাক হয় শান্তি যখন দেখে এ বাসার অতি আদরের ছেলে ইমন যখন স্কুলে না যাওয়ার জন্য রীতিমতো কান্না কাটি শুরু করে। অথচ স্কুল ছিল শান্তির জন্য সব চাইতে আনন্দের জায়গা। সকালে সবার সাথে এক সাথে স্কুল এ যাওয়া , স্কুল এর ঘণ্টা , বিশাল সেই মাঠ , ক্লাসে বসে এক সাথে সুর করে পড়া , মাস্টার মশাইদের কড়া শাসন, স্কুল শেষে গোল্লা ছুট , বউ-ছি খেলা...এ সব মনে করলে এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস ই পরে ওর ।
সব কিছু তো ঠিক মতই চলছিল ওর জীবনে । বাঁধ সাধল বাবার সেই মরন ব্যধি । এক ভিটে টুকু বাদে দোকান , জমি জমা সব কিছু বিক্রি করেও শেষ রক্ষা হল না। দুই এক দিন বাদে আত্মীয় স্বজনরাও কেমন যেন হাত গুটিয়ে নিল । ছেলে মেয়ে দুটিকে নিয়ে মায়ের তখন দিশেহারা অবস্থা । সব ই বুঝত শান্তি। তাই যখন ওদের পাড়ার এক খালা ওকে এখানে আসার কথা বলে তখন রাজি হয়ে গিয়েছিল ও।
মায়ের কতটা কষ্ট হচ্ছিল সেটা খুব ভাল মতই বুঝতে পারছিল। তাই নিজের চোখের পানিকে যতটা সম্ভব আটকিয়ে রেখেছিল। মায়ের আদর, ভাইয়ের হাসি, স্কুলের সব বন্ধুদের ফেলে চলে এল এই চার দেয়ালের কারাগারে। প্রথম প্রথম খুব দম বন্ধ লাগত। গ্রামের বিশাল সেই মাঠ টা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতো । কিন্তু তারপরও নিজেকে শক্ত করেছে...নিজের মন কে বুঝিয়েছে...মায়ের কষ্ট একটু হলেও দূর করতে হবে...ভাইকে বড় করে তুলতে হবে। নিজে হয়ত অনেক কিছু পারে নি...কিন্তু ভাইয়ের ক্ষেত্রে এমন হতে দেবে না। স্কুলের লতিফা আপা কে দেখে খুব শখ হত বড় হয়ে উনার মত করেই এমনি ভাবে পড়াবে ও। এখন নিজে না পারলে কি হবে...ভাইকে ঠিকই শিকদার স্যারের মতই বানাবে। চোখে মোটা চশমা আর হাতে বেত নিয়ে ছোট ভাইটাকে কল্পনা করতেই ফিক করে হেসে ফেলে ও ।
“কিরে শান্তি! কতক্ষন লাগে এই কয়টা প্লেট ধুতে শুনি একটু ।” “আসতেছি খালাম্মা!”- স্বপ্নের দেশ ছেড়ে আবার বাস্তবের মাটিতে নেমে আসে শান্তি। গ্রামের সেই উচ্ছল মেয়েটা আবার হয়ে যায় কাজ করার ছোট্ট একটা মেশিন। মনের সব স্বপ্ন গুলোকে একটা বদ্ধ ঘরে আটকিয়ে আবার মন দেয় বাসন ধোয়ায় ।
https://www.facebook.com/karimmufte?ref=tn_tnmn
আজ এ বাসার ছোট ছেলেটার জন্মদিন। কত আনন্দ আর রোশনাই দিয়েই না ভরে আছে পুরো বাসাটা ! কিন্ত সব রোশনাই কে ঝাপসা করে দিয়ে শান্তির চোখে বারবার যেন ভেসে উঠসে ওর ছোট ভাইটার মুখ। কত দিন যে ছোট ভাইটার ফোকলা দাঁতের হাসিটা দেখা হয় না! মায়ের পাশ ঘেঁষে কত দিন যে পরম শান্তির একটা ঘুম দেয়া হয় না! এ সবই তো সেদিনের কথাই মনে হয়।
বাবা মা আর ভাইটার সাথে অভাবের হলেও সুখের একটা সংসার ছিল। প্রতিদিন সকালে ওর ঘুম ভাঙত বাবার কুরআন তেলাওয়াতের শব্দে। রান্না ঘরের চুলার লাকড়ি পোড়ার ঘ্রাণ যেন নতুন একটা সকালের খবর জানান দিত। বাবা দিনের শুরুতে দোকানের ঝাঁপিটা খুলে বসতো । আর ছোট ভাইটাকে ইচ্ছা মত আদর করে ও দৌড় দিত স্কুল এর পথে। মাঝে মাঝে খুব অবাক হয় শান্তি যখন দেখে এ বাসার অতি আদরের ছেলে ইমন যখন স্কুলে না যাওয়ার জন্য রীতিমতো কান্না কাটি শুরু করে। অথচ স্কুল ছিল শান্তির জন্য সব চাইতে আনন্দের জায়গা। সকালে সবার সাথে এক সাথে স্কুল এ যাওয়া , স্কুল এর ঘণ্টা , বিশাল সেই মাঠ , ক্লাসে বসে এক সাথে সুর করে পড়া , মাস্টার মশাইদের কড়া শাসন, স্কুল শেষে গোল্লা ছুট , বউ-ছি খেলা...এ সব মনে করলে এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস ই পরে ওর ।
সব কিছু তো ঠিক মতই চলছিল ওর জীবনে । বাঁধ সাধল বাবার সেই মরন ব্যধি । এক ভিটে টুকু বাদে দোকান , জমি জমা সব কিছু বিক্রি করেও শেষ রক্ষা হল না। দুই এক দিন বাদে আত্মীয় স্বজনরাও কেমন যেন হাত গুটিয়ে নিল । ছেলে মেয়ে দুটিকে নিয়ে মায়ের তখন দিশেহারা অবস্থা । সব ই বুঝত শান্তি। তাই যখন ওদের পাড়ার এক খালা ওকে এখানে আসার কথা বলে তখন রাজি হয়ে গিয়েছিল ও।
মায়ের কতটা কষ্ট হচ্ছিল সেটা খুব ভাল মতই বুঝতে পারছিল। তাই নিজের চোখের পানিকে যতটা সম্ভব আটকিয়ে রেখেছিল। মায়ের আদর, ভাইয়ের হাসি, স্কুলের সব বন্ধুদের ফেলে চলে এল এই চার দেয়ালের কারাগারে। প্রথম প্রথম খুব দম বন্ধ লাগত। গ্রামের বিশাল সেই মাঠ টা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতো । কিন্তু তারপরও নিজেকে শক্ত করেছে...নিজের মন কে বুঝিয়েছে...মায়ের কষ্ট একটু হলেও দূর করতে হবে...ভাইকে বড় করে তুলতে হবে। নিজে হয়ত অনেক কিছু পারে নি...কিন্তু ভাইয়ের ক্ষেত্রে এমন হতে দেবে না। স্কুলের লতিফা আপা কে দেখে খুব শখ হত বড় হয়ে উনার মত করেই এমনি ভাবে পড়াবে ও। এখন নিজে না পারলে কি হবে...ভাইকে ঠিকই শিকদার স্যারের মতই বানাবে। চোখে মোটা চশমা আর হাতে বেত নিয়ে ছোট ভাইটাকে কল্পনা করতেই ফিক করে হেসে ফেলে ও ।
“কিরে শান্তি! কতক্ষন লাগে এই কয়টা প্লেট ধুতে শুনি একটু ।” “আসতেছি খালাম্মা!”- স্বপ্নের দেশ ছেড়ে আবার বাস্তবের মাটিতে নেমে আসে শান্তি। গ্রামের সেই উচ্ছল মেয়েটা আবার হয়ে যায় কাজ করার ছোট্ট একটা মেশিন। মনের সব স্বপ্ন গুলোকে একটা বদ্ধ ঘরে আটকিয়ে আবার মন দেয় বাসন ধোয়ায় ।
https://www.facebook.com/karimmufte?ref=tn_tnmn
Comments
Post a Comment