ক্যান্সার-রূপু

ঘটনাটি ২০১০ সালের... আমি তখন মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ উঠেছি... ঈদ এর ছুটি দিয়েছে, আমাদের পরিবারের সবাই মিলে আমাদের দেশের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার কথা... কিন্তু আমার জরুরী কাজ থাকায় আমি পরিবারের সাথে যেতে পারলাম না, সবাই ঈদ এর ২ দিন আগে বাড়ি চলে গেল, কিন্তু আমি গেলাম ঈদ এর আগের দিন... আমার বাস ছিল দুপুর ২ টায়, সকাল ৯ টায় আপু চলে যায় আর আমিও ওর সাথে বের হোই, যাতে বাসা তালা দেয়া নিয়ে কোন সমস্যায় না পড়তে হয় আমাকে... আমি "উদয়ন বিদ্যালয়" এর ওখানে বেঞ্চ এ বসে ঝাল মূড়ি খেয়ে সময় পার করতে থাকি... আমার থেকে সামান্য দুরেই দুজন বসে ছিল,তারা bf-gf.. আরো অনেকেই বসে আছে সেখানে...হঠাত করে ১ জন লোক চিতকার করে উঠল->"পুলিশে খবর দেন,মারা গেছে" আমি কথাটা শুনেই ডান দিকে তাকালাম, দেখি ১ ভিক্ষুক মহিলা মাটিতে পরে আছে, আমার হার্টবিট বেড়ে গেল, পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রফেসর দের বাস ভবন এর দাড়োয়ান রা দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ ই এগিয়ে যাচ্ছে না...আমি দৌড় দিয়ে মহিলার কাছে গেলাম, গিয়ে পাশে বসলাম, দেখি মহিলা নিশ্বাস নিচ্ছে, আমার আমার হার্টবিট টা এবার একটু শান্ত হল... আমার পাশে বসে থাকা bf-gf রাও এগিয়ে গেল, আমি ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে মহিলাকে খাওয়াতে গেলাম,কিন্তু মহিলা মরার মত পরে রইলো,আমি মহিলাকে নাড়া দিলাম এবং মুখে পানি ছিটিয়ে দিলাম,তারপর বোধহয় তার গ্যান ফিরে এল.. সে চোখ খুলল, কাশি দিতে লাগল... আমি মহিলাকে পানি খাওয়ালাম... তার বুক,হাত,গলা,মুখ সমস্ত কিছু কালো-কালো তাজা রক্তে ভর্তি... মহিলার বুকে একটি কাগজ ঝুলানো, তাতে লেখা->"আমি ক্যান্সার এর রুগি,বাংলাদেশ ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে আমাকে রিলিজ দিয়েছে,আমার দেশের বাড়ি দিনাজপুর,আমাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিন"... মহিলা আমার হাত খামচে ধরলো আর বলতে লাগল->"আমারে ট্রেনে উডায় দেও,আমি বাড়ি যাব,আমার বইনের কাছে যাব" সে বার-বার ১ ই কথা বলতে লাগল... আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না,এমন ঘটনা আমার জীবনে এর আগে কখন ঘটেনি,কি করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না... আমি বিড়-বিড় করে বলতে লাগলাম->"উনাকে হসপিটালে নেয়া দরকার,কেউ ১ টা রিক্সা ডাকেন" পরে চিতকার করে বলে উঠলাম..bf-gf এর মধ্যকার ভাইয়াটা তারাতারি রিক্সা ডাকল, আমি বললাম ঢাকা মেডিকেল... তারপর ঐ ভাইয়াটা মহিলাটিকে কোলে তুলে রিক্সায় উঠল, আমি আর আপুটা আর এক রিক্সায় উঠলাম... রিক্সায় বসে আমি আমার হাতে লেগে থাকা রক্ত ধুয়ে ফেললাম... আপুটা বলল তার কাছে কোন টাকা নেই, রিক্সা ভাড়া টা যেন আমিই দেই (ভাড়াটা এমনিতেও আমিই দিতাম, তারপরও, আমি অবাক হলাম,কারণ তার সাজ-পোশাক দেখে মনে হয় তার কাছে কমপক্ষে ১০০০ টাকা তো অবশ্যই থাকার কথা... পরে ভাবলাম ১ জন গরিব মহিলাকে সাহায্য করে তার ১৫ টাকা হয়ত সে নষ্ট করতে চাচ্ছে না, যাই হোক...) রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে আমি হাসপাতাল এর ভিতরে দৌড়ে যাই, দেখি ভাইয়াটা ততক্ষনে টিকিট কেটে রেডি করেছে...আমরা দৌড়ে যাই মহিলা ওয়ার্ডে... ডাক্তার আসে, মহিলাকে দেখেই সে বলল->"এ তো বাচবে না, এর সমস্ত বুকে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে,আমরা শুধু এর একটা উপকার ই করতে পারি,এর ব্যাথা টা কম করতে পারি, তবে এর জন্য যথেষ্ট পরিমান টাকা দরকার,এত টাকা কে দেবে? টাকা গুলো দেয়াও অযথা,কেননা সর্বচ্চ ৬ মাসের বেশি একে আর বাচান যাবে না"এখানে আমার কিছুই করার নেই,কারন টাকা বহন করার যগ্যোতা এখনো আমার হয়নি,আমি নিরবে নিষ্ঠুরের মত দাঁড়িয়ে রইলাম... আমার সাথের ভাইয়াটা বল্ল->"আপাতত ইনি সুস্থ্য হউয়া পর্যন্ত সব খরচ আমি দেব,পরে ইনি হাটার উপোযোগী হলে উনাকে দিনাজপুর পাঠিয়ে দেব" ডাক্তার ভাইয়াকে নিয়ে গেলেন কোই যেন, আমরা বসে রইলাম... দুপুর তখন দেড়টা বাজে, আর ১ ঘন্টা পর আমার বাস, আমার যাওয়া দরকার,তাই ওই ভাইয়ারা আসলেই আমি বললাম আমার যাওয়ার কথা,ভাইয়াটা বল্ল->"ঠিক আছে,চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি"আমি মহিলা'র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম... ভাইয়াটা আমাকে মেইন গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল এবং অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো... আমি চলে এলাম... তারপর আর ওই মহিলার খোজ জানিনা,আমার দায়িত্ব কতটুকু ছিল আর কতটুকু আমি পালন করেছি জানিনা, তবে ওই দিন ওই অসহায় ভিক্ষুক মহিলার সামান্য একটু সাহায্য করতে পেরে আজো নিজেকে ধন্য মনে হয়...
***এটি আমার জীবনের একটি সত্য ঘটনা***---

                                                                             ______রূপু

Comments

Popular posts from this blog

Arduino and MQ 2 gas sensor

Arduino Sound Sensor Module / Sound Sensor with arduino Code