সক্রেটিস: জীবন ও দর্শন নিয়ে কিছু কথা

সক্রেটিস: জীবন ও দর্শন নিয়ে কিছু কথা
পাশ্চাত্য সভ্যতার ইতিহাসে মহান দার্শনিক সক্রেটিস (খ্রি. পূ. জন্ম: ৪৬৯-মৃত্যু: ৩৯৯, জন্মস্থান:এথেন্স, গ্রীস) এর নাম উজ্জ্বল ও ভাস্বর হয়ে আছে। তিনি এমন এক দার্শনিক আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রবর্তক যা-কিনা পাশ্চাত্য সভ্যতা, সংস্কৃতি ও দর্শনকে দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু লক্ষণীয় যে, মহাজ্ঞানী দার্শনিক হিসেবে বিশ্বব্যাপী যার এত সুখ্যাতি সেই সক্রেটিসের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে বেশী কিছু জানা যায় না। তবে বর্তমানকালে তার জীবন ও দর্শনের তিনটি উৎসের উল্লেখ করা যেতে পারে, যথা- প্লেটোর ডায়ালগগুলো, এরিস্টোফেনিসের নাটকগুলো এবং জেনোফেনোর ডায়ালগগুলো। সক্রেটিস নিজে কিছু লিখেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্লেটোর বর্ণনামতে সক্রেটিসের বাবার নাম সফ্রোনিস্কাস, যিনি পেষায় একজন স্থপতি (অন্যমতে: ভাস্কর) এবং মায়ের নাম ফিনারিটি, যিনি একজন ধাত্রী ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম জ্যানথিপ। সংসার জীবনে তাদের তিন ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। অভাবের সংসার বলে সংসার জীবনে খুব একটা সুখী ছিলেন না। সংসারের জ্বাল-যন্ত্রণা ভুলতে তিনি বেশীরভাগ সময় দার্শনিক তত্ত্ব আলোচনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। সত্য ও জ্ঞানের প্রতি অবিচল সক্রেটিসকে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তথাকথিত অভিযোগে তাকে হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদন্ড- দেয় এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সক্রেটিস নিজ হাতে বিষাক্ত হেমলকের রস পান করে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়েন। তার নশ্বর দেহটা এথেন্সে মাটিতে মিশে গেলেও তার আদর্শ ও চিন্তা যুগ যুগ মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার প্রেরণা যুগিয়েছে।

সক্রেটিস তার নিজ দর্শন প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার প্রভৃতি যখন যেখানে সুবিধা সেখানেই আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার সাথে বিনামূল্যে তিনি দর্শন আলোচনায় প্রবৃত্ত হতেন। সোফিস্টদের মতো তিনি শিক্ষাদানের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণকে ঘৃণা করতেন। দার্শনিক আলোচনার প্রতি তার এত বেশি ঝোঁক ছিল যে, তিনি প্রায়শই বলতেন: "নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়াই আমার অভ্যাস, আর এজন্যই এমনিতে না পেলে পয়সা-কড়ি দিয়ে হলেও আমি দার্শনিক আলোচনার সাথী সংগ্রহ করতাম।"
তিনি নিজেকে কখনও সোফিস্টদের মত জ্ঞানী ভাবতেন না বরং তিনি বরং বলতেনঃ "আমি জ্ঞানী নই, জ্ঞানানুরাগী মাত্র। একটি জিনিসই আমি জানি; আর সেটি হলো এই যে, আমি কিছুই জানি না।"

সক্রেটিসের শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির (dialecfical method) মাধ্যমে প্রথমে প্রতিপক্ষের মত স্বীকার করে পরে যৌক্তিক উপায়ে তা খন্ডন করতেন। বিরুদ্ধ পক্ষের জন্য তিনি তর্কের ফাঁদ পাততেন এবং পরাজিত হয়ে যতক্ষণ না প্রতিদ্বন্দ্বী নিজের ভুল স্বীকার করে, ততক্ষণ তাকে প্রশ্ন করতেন। অনবরত প্রশ্ন করে উপকথকের মন থেকে ভুল ধারণা দূর করে তার মুখ থেকেই তিনি সত্য বের করতেন।

Comments

Popular posts from this blog

Learning to Pray

Arduino and MQ 2 gas sensor